ভাগ – ১ : শহরের ভিড়ের ভেতর একা একা
ঢাকার ভিড় ঠাসা শহরে মানুষের কোলাহলের ভেতরেও অনেক সময় এক অদ্ভুত শূন্যতা লুকিয়ে থাকে। তেমনই শূন্যতা নিয়েই পথ চলছিল আরিয়ান। বয়স চব্বিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। বই, ক্লাস, আর মাঝেমধ্যে গিটার বাজানো ছাড়া জীবনে যেন কোনো রঙ নেই। বন্ধুরা যখন মজা করে আড্ডায় মেতে থাকে, আরিয়ান তখন কেমন যেন ভেতরে ভেতরে নিঃসঙ্গ।
সেদিন বিকেলটা ছিল অন্যরকম। শরতের আকাশ, হালকা বাতাসে ভেসে আসা কাঠগোলাপের গন্ধ—সবকিছু কেমন যেন রহস্যময় লাগছিল।
গাবতলীর বাস কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ছিল সে। অফিস থেকে ফেরত আসা মানুষে চারদিক গমগম করছে। ঠিক তখনই ভিড়ের ভেতর দিয়ে চোখে পড়ল তাকে।
সাদা সালোয়ার কামিজ, চুলগুলো হালকা বাতাসে উড়ছে। কাঁধে একটা নীল ব্যাগ। মেয়েটা যেন ভিড়ের ভেতর থেকেও আলাদা হয়ে উঠেছে।
আরিয়ান তাকিয়েই রইল। প্রথমে মনে হলো চোখের ভুল—কিন্তু না, মেয়েটা সত্যিই ওর দিকেই হালকা একবার তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নিল। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার মতো মুহূর্তটা যেন অনেকটা সময় স্থির করে দিল।
আরিয়ান কখনোই প্রেমে পড়েনি। আকর্ষণও খুব একটা অনুভব করেনি। কিন্তু এই এক মুহূর্তে মনে হলো—এতদিন যে শূন্যতা বুকের ভেতর ছিল, তার উত্তর হয়তো এই মেয়েটার হাসিতে লুকিয়ে আছে।
মেয়েটা বাসে উঠল। জানালার পাশে বসে বাইরে তাকাল। আরিয়ান এক অদ্ভুত তাড়নায় উঠে পড়ল একই বাসে।
ভাগ – ২ : জানালার পাশে প্রথম আলাপ
বাসটা ধীরে ধীরে শহরের ভিড় ঠেলে এগোতে লাগল। গ্লাসের জানালা দিয়ে ঢুকে পড়া হালকা বাতাসে মেয়েটার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ছে। সে এক হাত দিয়ে চুল সামলাচ্ছিল, অন্য হাতে আঁকড়ে ধরেছিল ব্যাগের স্ট্র্যাপ।
আরিয়ান একেবারে পেছনের সিটে দাঁড়িয়ে। ভিড়ে বসার সুযোগ নেই। কিন্তু চোখ যেন আটকে গেছে জানালার পাশে বসা মেয়েটার ওপর।
হঠাৎ করেই এক ঝটকায় বাসটা ব্রেক কষল। হঠাৎ ধাক্কায় আরিয়ান সামনে গিয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই মেয়েটি হাত বাড়িয়ে সিটের পাশে ধরে দাঁড়াতে সাহায্য করল।
– “আপনি ঠিক আছেন তো?” মেয়েটার কণ্ঠটা নরম, কিন্তু উদ্বিগ্ন।
আরিয়ান একটু অপ্রস্তুত হয়ে হেসে বলল,
– “হ্যাঁ, ধন্যবাদ… হঠাৎ সামলাতে পারিনি।”
কথাটা খুব সাধারণ হলেও, কণ্ঠের ভেতর কেমন যেন কম্পন ছিল। মেয়েটি এক চিলতে হেসে জানালার বাইরে তাকাল।
কয়েক মিনিট চুপচাপ কেটে গেল। আরিয়ান ভাবছিল—কথা বলবে কি বলবে না। অবশেষে সাহস করে বলেই ফেলল,
– “আসলে… আমি মাঝে মাঝে ভাবি, এই শহরের ভিড়ে আমরা প্রতিদিন হাজার মানুষের মুখ দেখি। কিন্তু কিছু মুখ… কেন যেন মনে থেকে যায়।”
মেয়েটা অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল।
– “মানে?”
– “মানে এই যে… আপনাকে দেখে ঠিক এমনটাই মনে হলো।”
মেয়েটা হালকা হেসে বলল,
– “তাহলে মনে থাকার মতো কিছু বলাই ভালো, তাই না?”
– “আপনার নামটা যদি জানতাম?” আরিয়ানের কণ্ঠে দ্বিধা ছিল, কিন্তু চোখে স্পষ্ট আগ্রহ।
মেয়েটা এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল, তারপর বলল,
– “মায়া।”
নামটা শোনামাত্রই আরিয়ানের বুকের ভেতর অদ্ভুত একটা শিহরণ খেলে গেল। যেন নামের ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় আকর্ষণ।
– “মায়া… সুন্দর নাম।”
মেয়েটা আবারও হাসল।
– “তাহলে আপনার নামটাও জানাই যায়, কী বলেন?”
– “আমি আরিয়ান।”
দু’জনের চোখে চোখ পড়ল। বাসের শব্দ, হর্ন, মানুষের কথাবার্তা—সব যেন মিলিয়ে গেল। থেকে গেল কেবল দু’জন মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া এক অদ্ভুত নীরব সংযোগ।
ভাগ – ৩ : আকর্ষণের প্রথম বীজ
বাস ধীরে ধীরে যাত্রী কমাতে শুরু করল। ভিড় একটু হালকা হলো। আরিয়ান দাঁড়িয়ে থেকেও বুঝতে পারছিল, সময় যেন খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। হয়তো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েটি নেমে যাবে, আর হয়তো আর কখনো দেখা হবে না।
মনে এক ধরনের তাড়া কাজ করছিল। সাহস করে বলল –
– “আপনি কি প্রায়ই এই রুটে চলাফেরা করেন?”
মায়া জানালার বাইরে তাকিয়েই উত্তর দিল –
– “হ্যাঁ, ক্লাস শেষে বেশিরভাগ সময় এই বাসেই ফিরি। আপনি?”
– “আমিও… মাঝে মাঝে। তবে মনে হয় আজকের যাত্রাটা আলাদা।”
মায়া ভ্রু কুঁচকে একটু তাকাল।
– “কেন আলাদা?”
– “কারণ আজ প্রথমবার মনে হলো, ভিড়ের শহরেও কেউ এমন আছে, যার সাথে দুইটা কথা বললেই মনটা হালকা লাগে।”
মায়া কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর ধীরে ধীরে বলল –
– “আপনার কথাটা অদ্ভুত শোনালেও মন্দ লাগছে না।”
ঠিক তখনই কন্ডাক্টর এসে ভাড়া নিতে চাইলো। মায়া ব্যাগ থেকে টাকা বের করছিল। আরিয়ান হঠাৎই বলে উঠল –
– “আমি দিয়ে দিচ্ছি।”
মায়া ভ্রু উঁচু করে তাকাল –
– “কেন? আমি তো দিতে পারি।”
– “জানি। তবে এটা থাক, প্রথম দেখা বলেই হয়তো মনে রাখতে সুবিধা হবে।”
মায়া হেসে ফেলল। ভাড়া দিয়ে দেওয়ার পর আরিয়ান বুঝতে পারছিল—মেয়েটার চোখের হাসিটা সত্যিই আলাদা।
কিছুটা নীরবতা পেরিয়ে মায়াই আবার কথা শুরু করল –
– “আপনার কি ফেসবুক বা ফোন নাম্বার আছে? নাহয় পরেরবার যদি হঠাৎ না দেখা হয়…”
আরিয়ান ভেতরে ভেতরে অবাক হলো। এত সহজে সে আশা করেনি। তাড়াতাড়ি মোবাইল বের করে নাম্বারটা শেয়ার করল।
– “এই তো, এবার আর হারিয়ে যাওয়া নয়।”
মায়া মাথা নেড়ে জানালার বাইরে তাকাল, কিন্তু ঠোঁটের কোণে লুকানো হাসিটা আরিয়ান স্পষ্ট দেখতে পেল।
বাসটা পরের স্টপেজে থামল। মায়া নেমে যাওয়ার আগে একবার ঘুরে তাকাল, চোখে যেন এক অদ্ভুত প্রতিশ্রুতি—আবার দেখা হবে।
আরিয়ান জানালার ভেতর থেকে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছিল, এভাবে কেউ হঠাৎ জীবনে এসে আবার মিলিয়ে যেতে পারে না। আজকের যাত্রা সত্যিই অন্যরকম ছিল।
সেদিন রাতেই আরিয়ানের ফোনে মেসেজ এলো—
“আমি মায়া। বাসে দেখা হয়েছিল। বাড়ি পৌঁছেছেন তো?”
আরিয়ান হেসে মোবাইল হাতে নিল।
একটা অদ্ভুত উষ্ণতা বুক ভরে গেল।
ভাগ – ৪ : কথা থেকে বন্ধুত্বের শুরু
সেদিন রাতে আরিয়ানের মনটা কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেল। মেসেজের পর থেকে তার চোখে ঘুমই আসছিল না। প্রতি মিনিটেই সে ফোনটা হাতে নিচ্ছিল, দেখছিল মায়া অনলাইনে আছে কিনা।
মেসেজ বক্সে লিখল –
– “হ্যাঁ, ঠিকঠাক পৌঁছে গেছি। ধন্যবাদ খোঁজ নেওয়ার জন্য। আপনি?”
কয়েক মিনিট পর রিপ্লাই এল –
– “আমিও ভালোভাবে পৌঁছেছি। আসলে… জানি না কেন, মনে হলো জিজ্ঞেস করি।”
আরিয়ান হেসে বলল –
– “হয়তো এই কারণেই আজকের দিনটা আমার জন্য বিশেষ।”
তারপর শুরু হলো কথা।
প্রথমে পড়াশোনা নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প, প্রিয় গান, সিনেমা, বই… যেন শেষই নেই। মাঝেমধ্যে মায়ার ছোট ছোট ইমোজি ভরা মেসেজগুলোতে আরিয়ান অনুভব করল, সে হয়তো শুধু আকর্ষণ নয়—তার চেয়েও গভীর কিছুর পথে হাঁটছে।
পরের দিন সকালেই মায়া ইনবক্সে লিখল –
– “ক্লাস আছে আজ?”
– “হ্যাঁ। তবে মনে হচ্ছে দিনটা ভালো কাটবে।”
– “কেন?”
– “কারণ দিনের শুরুই হলো আপনার মেসেজ দিয়ে।”
মায়া হেসে রিপ্লাই দিল –
– “আপনি কিন্তু কথায় অনেকটা কবির মতো শোনান।”
দিন গড়িয়ে এক সপ্তাহ কেটে গেল। প্রায় প্রতিদিনই তাদের কথা হচ্ছিল। ফোনে, ফেসবুকে, কখনো দেরি রাত পর্যন্ত।
একদিন আরিয়ান গিটার বাজাচ্ছিল। হঠাৎ সাহস করে একটা ভয়েস নোট পাঠাল—নিজের কণ্ঠে পুরোনো একটা গান।
কিছুক্ষণ পর মায়ার রিপ্লাই –
– “আপনার গিটার বাজানোটা দারুণ লাগল। গানটাও… মনে হলো কেবল আমাকেই শোনাচ্ছেন।”
আরিয়ান মনে মনে ভাবল—সত্যিই তো, এ গান তো আসলে ওকেই শোনানোর জন্য গেয়েছিল।
কিছুদিন পর মায়া হঠাৎ লিখল –
– “আপনি কি জানেন, আমাদের এই দেখা হওয়াটা হয়তো কাকতালীয় ছিল না?”
– “মানে?”
– “মাঝে মাঝে মনে হয়, কিছু মানুষকে নিয়তি আমাদের জীবনে আনে… হয়তো কোনো কারণেই।”
আরিয়ান স্ক্রিনে তাকিয়ে রইল। বুকের ভেতর শিহরণ খেলে গেল।
মনে মনে বলল – “যদি সত্যিই তাই হয়… তবে সেই কারণটা হয়তো প্রেম।”
ভাগ – ৫ : প্রথম দেখা, ভিড়ের বাইরে
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন কথা হচ্ছিল আরিয়ান আর মায়ার। ইনবক্সে মেসেজ, ফোন কলে গল্প, গান শেয়ার—সবকিছু মিলিয়ে দু’জন যেন একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাদের দেখা কেবল সেই বাসযাত্রাতেই সীমাবদ্ধ।
একদিন মায়াই বলল –
– “শোনেন, শুধু ফোন আর মেসেজে কি সব বন্ধুত্ব টিকে থাকে?”
আরিয়ান একটু চমকে গেল।
– “মানে?”
– “মানে… একদিন সামনাসামনি বসে গল্প করলে কেমন হয়? ধরা যাক, কোনো ক্যাফেতে।”
আরিয়ানের বুকের ভেতর যেন হঠাৎ ঢেউ খেলল। এতদিন ভেবেছিল সে-ই হয়তো প্রস্তাব দেবে, কিন্তু মায়ার কাছ থেকেই শুনে মনে হলো, হয়তো তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হওয়ার পথে হাঁটছে।
পরের শুক্রবার ঠিক হলো—ধানমন্ডির লেকের পাশে ছোট্ট এক ক্যাফেতে দেখা হবে।
সেদিন আরিয়ান সকালে থেকেই উত্তেজিত। বারবার আয়নায় তাকাচ্ছিল, জামাকাপড় বদলাচ্ছিল। অবশেষে নীল শার্ট আর কালো জিন্সে নিজেকে মানিয়ে নিল। মনে হচ্ছিল, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনে যাচ্ছে সে।
ক্যাফেতে ঢুকেই ওকে দেখল। মায়া জানালার পাশে বসে আছে, হাতে এক কাপ কফি। সাদা টপ আর নীল ওড়নায় একেবারে সহজ অথচ অনন্য লাগছিল তাকে।
– “এই যে, অনেক অপেক্ষা করালেন!” মায়া হেসে বলল।
আরিয়ান লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বসে পড়ল।
– “আসলে ভয় হচ্ছিল… এই প্রথম তো।”
মায়া মাথা নেড়ে বলল –
– “ভয় নয়, এটাকে বলা যায় উত্তেজনা। নতুন কিছু শুরু হলে এমনটা হতেই পারে।”
তারপর শুরু হলো গল্প।
প্রথমে পড়াশোনা নিয়ে, পরে পরিবার, শখ, স্বপ্ন—সবকিছু নিয়ে আলাপ। কখন যে এক কাপ কফি শেষ হলো, তারা বুঝতেই পারল না।
মায়া জানাল – ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকি করতে ভালোবাসে। তার স্বপ্ন একদিন নিজের ছোট্ট গ্যালারি করা। আরিয়ানও বলল, সে একদিন গান নিয়ে কিছু করতে চায়।
মায়া হেসে বলল –
– “তাহলে একদিন হয়তো আমার গ্যালারিতে আপনার গান বাজবে।”
আরিয়ান মনে মনে ভাবল—যদি সত্যিই এমন দিন আসে, তবে সেটাই হবে তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত।
সেদিন বিদায় নেওয়ার আগে মায়া হঠাৎ বলল –
– “জানেন, আপনার সাথে দেখা করার পর আজ মনে হলো… আমি ঠিকই ভেবেছিলাম। কিছু কিছু মানুষকে নিয়তি আমাদের জীবনে আনে।”
আরিয়ান চুপ করে শুধু হাসল।
কিন্তু অন্তরে যেন অদৃশ্য কণ্ঠস্বর ফিসফিস করে বলল—
“এটাই শুরু। এখান থেকে জন্ম নেবে এক সম্পর্ক, যার পথচলা সহজ হবে না।”
ভাগ – ৬ : আকর্ষণ থেকে প্রেমের দিকে
সেদিন ক্যাফের আড্ডার পর থেকে আরিয়ান আর মায়ার বন্ধুত্ব যেন অন্যরকম হয়ে গেল। আগের মতো শুধু ইনবক্সে কথাবার্তা নয়, এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তারা কোথাও না কোথাও দেখা করত। কখনো লেকের ধারে হাঁটা, কখনো ছোট্ট কোনো বইয়ের দোকানে ঘোরাঘুরি, কখনো সিনেমা হলে বসে একই সিনেমা দেখা।
আরিয়ান লক্ষ্য করছিল—মায়ার হাসি যতবার সে দেখে, বুকের ভেতর ততবার অজানা একটা শান্তি জন্ম নেয়। অথচ সেই শান্তির ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক অদ্ভুত অস্থিরতা, যা তাকে প্রতি মুহূর্তে মায়ার আরো কাছে টেনে নেয়।
একদিন সন্ধ্যায় ধানমন্ডি লেকের ধারে বসেছিল তারা। চারপাশে ঝিকিমিকি আলো, পানির ওপর প্রতিফলন, হালকা বাতাস—সব মিলিয়ে মুহূর্তটা যেন জাদুকরী হয়ে উঠেছিল।
মায়া হঠাৎ বলল –
– “আপনি জানেন, আমি খুব বেশি মানুষকে বিশ্বাস করি না। কিন্তু কেন জানি আপনার সাথে কথা বলতে ভয় লাগে না।”
আরিয়ান তাকিয়ে রইল ওর দিকে।
– “হয়তো… আপনার মন চাইছে আমাকে বিশ্বাস করতে।”
মায়া কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর ধীরে ধীরে বলল –
– “মাঝেমধ্যে মনে হয়, আপনার সাথে আমার পরিচয়টা অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল।”
আরিয়ান বুঝতে পারল, এ শুধু বন্ধুত্বের কথা নয়। এর ভেতরে আছে এক অদ্ভুত আবেগের টান।
সেই রাতেই ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা হলো। হঠাৎ করে মায়া বলল –
– “আরিয়ান, যদি কখনো আমি ভুল করি… যদি কখনো আমি আপনাকে কষ্ট দিই, আপনি কি আমাকে ক্ষমা করবেন?”
প্রশ্নটা শুনে আরিয়ান অবাক হলো।
– “এমন কথা কেন বলছেন? আপনি কখনো কষ্ট দেবেন কেন?”
– “জানি না। তবে জীবন তো সবসময় একই পথে চলে না।”
আরিয়ান থমকে গেল। মনে হলো এই এক বাক্যে মায়া যেন ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়ে গেল।
কিন্তু সেদিন রাতে সে কেবল একটাই উত্তর দিল –
– “যতদিন আমি আপনাকে ভালোবাসব, ততদিন আপনার সব ভুল আমার কাছে তুচ্ছ হয়ে থাকবে।”
লাইনটা শুনে মায়া চুপ হয়ে গেল। তবে তার নীরবতাই যেন অনেক কিছু বলে দিল।
সেদিন থেকেই তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের সীমানা ছাড়িয়ে গেল। আকর্ষণ ধীরে ধীরে রূপ নিল প্রেমে।